জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে আবদুর রহমান নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে ওই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করছে র্যাব। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ রোববার র্যাবের পক্ষ থেকে এ খবর জানানো হয়।
আবদুর রহমান রাবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার পলিপলাশ গ্রামে। অন্যদিকে, র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার অপর তিনজন হলেন জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর কুমাড়িয়া গ্রামের আলী সুমন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের হৃদয় খান পারভেজ ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার শেখের তালুক গ্রামের আশরাফুল ইসলাম।
রাবি শিক্ষার্থী আবদুর রহমানের বাবা ইলিয়াস আলীর দাবি, গত বৃহস্পতিবার মেস ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাজশাহীতে গিয়ে নিখোঁজ হন আবদুর রহমান। এ ব্যাপারে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় গত শুক্রবার একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন ইলিয়াস আলী।
র্যাব-৫-এর কোম্পানি অধিনায়ক এ টি এম মাইনুল ইসলামের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আনসার আল ইসলামের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া চার যুবক পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে গোপন বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব-৫-এর রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল এ অভিযান চালায়। তাঁদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি র্যাবের।
তবে আবদুর রহমানের পরিবার এবং রাবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হলে সিট না পাওয়ায় আবদুর রহমান বিনোদপুর এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে অন্য শিক্ষার্থীদের মতো বাড়িতে চলে যান তিনি। তবে মাস পার হলে যেহেতু মেসের ভাড়া গুনতে হচ্ছিল, তাই মেস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কাপড়-চোপড় নেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া থেকে রাজশাহীর মেসে গিয়ে সিট ছাড়তে যান তিনি।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, গত শুক্রবার সকালে আবদুর রহমান তাঁর বাবাকে ফোন করে দুপুরের মধ্যে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। কিন্তু, এরপর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শুক্রবার দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা হলেও তিনি বাসায় না ফেরায় সম্ভাব্য সব আত্মীয়-স্বজনের বাসায় খোঁজ করে তাঁর পরিবার। কিন্তু, এতেও তাঁর সন্ধান না পেয়ে ওইদিন রাতেই তাঁর বাবা ইলিয়াস আলী বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় জিডি করেন।
আবদুর রহমানের ছোট ভাই রাকিব বলেন, ‘রোববার দুপুরে গোদাগাড়ী থানা থেকে বাবার কাছে একটি কল আসে। সেখানে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় বাবার। তিনি বর্তমানে গোদাগাড়ী থানায় পুলিশ হেফাজতে আছেন। বাবাকে থানায় যেতে বলেছে। আমার ভাই আবদুর রহমান নিয়মিত নামাজ পড়লেও কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।’
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রেজাউর রহমান বলেন, ‘গতকাল ওই শিক্ষার্থীর বাবা আমাকে ফোন করে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর আমি প্রক্টরকে বিষয়টি অবহিত করি। আজ বিকেলে ফেসবুকে দেখলাম, অনেকে পোস্ট দিয়েছে জঙ্গি বৈঠকের সময় রহমান র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন।’